Sunday, June 23, 2013

অনুগল্পঃ অনাকাঙ্খিত ঝামেলা


শাহবাগ থেকে টিএসসির দিকে আসছি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মত বাজে। টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। এই কারনেই রাস্তা ফাঁকা ফাঁকা। মাঝে মাঝে দুএকটা রিকশা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। জোরে বৃষ্টি নামার আগেই কোথাও আশ্রয় নিতে হবে। দ্রুত হেঁটে যাচ্ছি।

-ভাইয়া, একটু শুনুন প্লিজ!
কাতোর কণ্ঠ। কণ্ঠ উদ্দেশ্য করে তাকালাম। রাস্তার পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিয়ন আলোই চেহারা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কি ঝামেলা! এড়িয়ে যাবো কিনা ভাবছি! 
-আমাকে বলছেন?

-হ্যাঁ! আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন?
বিপদের গন্ধ পেলাম। ধান্দাবাজ হওয়ার সম্ভবনা ১০০%।. ঝামেলাই জড়াতে চাচ্ছি না। এমন ঘটনা অহরহ হচ্ছে। এরা সব প্রতারকচক্র। 

-সরি আপু! আমার একটু তাড়া আছে...
-ভাইয়া, আমি খুবই অসুস্থ! প্লিজ আমাকে একটু হেল্প করেন। আল্লাহ্‌র দোহায় লাগে! আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, পড়ে যাবো!
ঠিক বুঝতে পারছি না কি করা উচিত। এমন ধান্দা নতুন না। এরা আবার অভিনয়েও পারদর্শী! কাছে মোবাইল আর কয়েকটা টাকা ছাড়া তেমন কিছু নাই। তবুও ঝামেলায় জড়িয়ে...

-ভাইয়া আমি খারাপ মেয়ে না! রোকেয়া হলে থাকি। খুব অসুস্থ, প্লিজ আমাকে একটু হলের গেট পর্যন্ত রেখে আসুন না!
ভাল মত খেয়াল করলাম। নিয়ন আলোতে চোখ মুখ দেখে মনে হল মেয়েটা সত্যি অসুস্থ। 
-আপনাকে রিকশাতে তুলে দিলে হবে? 
-আমি ঠিক দাঁড়াতে পারছি না। খালি রিকশা আসছে না।
-আপনি হাঁটতে পারবেন তো?
-পারব মনে হয়। কিছু মনে না করলে আমি আপনার হাতহাতটা ধরে আগাতে থাকি।
-ঠিক আছে। চলুন।


মেয়েটা বেশ অসুস্থ বোঝা যাচ্ছে। তবুও চারেদিক ফাঁকা, ভয়ও লাগছে। আমার হাতটা ধরে আস্তে আস্তে হাঁটছে।
টিএসসি’র কাছাকাছি আসতেই প্রায় দশ মিনিট লেগে গেল। বৃষ্টি পড়ছে, খালি রিকশাও নেই। কোথায় থেকে হুট করে তিনটা ছেলে ছুটে আসলো।

-এই, আপনি কে? এই লোক ওর হাত ধরছেন ক্যান? ঐ মিয়া...
যদিও মেয়েটি আমার হাত ধরে আছে তবুও ঠিক কি বলব বুঝতে পারছিলাম না! এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম! ফাঁদে পড়ে গেছি! চুপ থাকা ছাড়া আর কিচ্ছু করার নেই! 
ছেলে তিনটি খুব হাম্বিতাম্বি শুরু করল। মেয়েটা তাদের থামানর চেষ্টা করছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বের হওয়ার রাস্তা চিন্তা করছি! শেষ পর্যন্ত মেয়েটি ওদের থামাল-

-শোন, আমি অসুস্থ। হাঁটতে পারছিলাম না, উনি আমাকে হল পর্যন্ত পৌছিয়ে দিচ্ছেন। আর উনি আমার হাত ধরেন নি! বেয়াদবির একটা সীমা আছে! তুমি উনাকে এই সব বলছ ক্যান? 
-আমি ভেবেছি...!
-তোমার কিচ্ছু ভাবতে হবে না। উনাকে সরি বল। উনি না থাকলে আজ আমি ওখানেই পড়ে থাকতাম। সরি বল তাড়াতাড়ি! আমি কথা বলতে পারছি না। আমাকে বিরিক্ত করো না!
-ওকে! সরি ভাইয়া! সত্যি অনেক সরি! ওকে খুব ভালোবাসি তো, মাথা ঠিক ছিল না!
আমি জানটা ফেরত পেলাম!
-ভালোবাসেন ঠিক আছে তো আপনি আমাকে কেন এই সব...।. আপনার উনাকে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ ছিল। উনি তো আপনার আপন মানুষ!
-সরি ভাইয়া... সরি... সরি সরি প্লিজ... প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
-ওকে ঠিক আছে!
এবার মেয়েটা বলল, “ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না, আপনি উনার কোথায় কিছু মনে নেবেন না। ওর তরফ থেকে আমি সরি।“
-ওকে ওকে!
-ভাইয়া, আপনি এখন কোথায় যাবেন?
-নিউমার্কেটের দিকে।
-আচ্ছা। আমি আর দাঁড়াতে পারছি না! রাফি, আমাকে হলে দিয়ে আয়। আর তুমি উনাকে নিউমার্কেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসো। ভাইয়া আমি গেলাম, ভাল থাকবেন। সরি কিছু মনে করবেন না!


মেয়েটা তার এক বন্ধুর সাথে চলে গেল। আমি তার বয়ফ্রেন্ড ছেলেটাকে বললাম,
-বৃষ্টিতে ভিজে কাজ নেই। আপনি চলে যান আমি রিকশা নিয়ে চলে যাবো।
-তাই কি হয় ভাই! চলেন আপনাকে আমি এগিয়ে দিয়ে আসি।
-হবে না কেন? আপনি বরং আমাকে একটা রিকশা দেখে দিয়ে চলে যান। কোনো সমস্যা নাই।

ভাল বিপদে পড়া গেছিল, ভালই ভালই পার পাওয়া গেল! এই বেশি!
তবে উটকো ঝামেলা গুলোর কারণে এখন আর মানুষ মানুষের উপকারে এগিয়ে আসতে সাহস পায় না। মাঝে থেকে আসলেই যারা বিপদগ্রস্থ তারা সাহায্য পায় না।

শূন্য পথিকের মূল পোস্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment