Tuesday, January 21, 2014

অনুগল্পঃ টিকিট


ঈদে বাড়ি ফেরার ট্রেনের টিকিটের জন্য ঐন্দ্রিলা সকালে একটি বেসরকারি ফোন কোম্পানির ই-টিকিটিং বুথে আজ লাইনে দাঁড়িয়েছিল। আজ থেকে রেলের অগ্রিম ঈদ টিকিটের শিডিউল শুরু হচ্ছে। অক্টোবরের ১০ তারিখে ভার্সিটির শেষ পরীক্ষা, ১১ তারিখ থেকে ঈদের শিডিউল শুরু হবে। আজ সেই ১১ তারিখের অগ্রিম টিকিট দিচ্ছে। সকাল ৯টার মধ্যে সে মোবাইল টিকিটের জন্য এসে দেখে বাইরে মানুষের বিশাল এক সারি! প্রথম দিনে এতটা ভিড় হবে ভাবতে পারে নি। প্রায় ঘন্টা তিনেক অপেক্ষা করার পর তার পালা আসলো। নিয়ম মত বুথ থেকে একটা
চিরকুট সংগ্রহ করে তাতে সম্ভব্য ট্রেনের নাম, যাত্রার তারিখ, দিন, মোবাইল নম্বর সহ সব তথ্য দিয়ে পূরণ করে বুথে জমা দিল। কাস্টমার বুথে বসে থাকা সুদর্শন যুবক হাসি মুখে তথ্য গুলো নিয়ে চেক করতে শুরু করলো। কিন্তু বিধি বাম! সেই দিনের কোনো ট্রেনের টিকিট নাই। আগ্রিম সব টিকিট বিক্রি শেষ! ঐন্দ্রিলার মন ভয়ংকর খারাপ হয়ে গেল, সকাল থেকে তার সকল পরিশ্রম মাটি। সবচে বড় কথা একা মেয়ে হয়ে ৬-৭ ঘন্টার ট্রেন জার্নি দাঁড়িয়ে করাটা প্রায় অসম্ভব। সে আসলে বুঝতে পারছে না কী করা উচিৎ। মন খারাপ করে সে বুথ থেকে বেরিয়ে আসলো। সারা দিন নানা ভাবে বাস বা ট্রেনের টিকিটের জন্য চেষ্টা করলো। কিন্তু কোনো জোগাড় হলো না। 

দুঃশ্চিন্তার সন্ধায় অপরিচিত একটা ফোন কল আসলো।
-হ্যালো, কে বলছেন?
-নাম বললে চিনবেন না। আপনি আজকে একটা ই-টিকিটের জন্য এসেছিলেন না?
-জি... আপনি?
-আচ্ছা পরের দিনের একটা টিকিট, মানে ১২ তারিখের টিকিট হলে আপনার হয়?
-জি হয়। কিন্তু আপনি কে?
-আজকে মোবাইল টিকেটিং বুথে যে বসে ছিল আমি সে; শাহেদ।

ঐন্দ্রিলা অবাক হয়ে বলল, আপনি আমার মোবাইল নম্বর কোথায় পেলেন?
-ম্যাম, আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আপনি একটা চিরকুট ফিল আপ করেছিলেন ওখানে আপনার এই নম্বরটা ছিল...
-ও আচ্ছা!
-পরের দিনের একটা টিকিট লাগলে আমি আপনাকে একটা ম্যানেজ করে দিতে পারি।
-আজ যারা টিকিট পান নি, তাদের সবাইকেই কি আপনি ফোন করে টিকিট দিচ্ছেন নাকি! 

-আরে না না...!
-তবে আমার জন্য এই বিশেষ সেবা ক্যান?
-হাহা... যদি আপনার টিকিটটা লাগে তবে কাল দুপুর তিনটার পর গুলশান এসে আমাকে এই নম্বরে ফোন দেবেন কারণটা না হয় তখনই বলবো। কি আসছেন তো?
ঐন্দ্রিলা ইতস্তত হয়ে বলল, জি...
-তবে কাল দেখা হচ্ছে। ভালো থাকবেন...


শাহেদ নামের মানুষটা খট্‌ করে ফোনটা রেখে দিল! ফোন রাখার সাথে সাথে ঐন্দ্রিলা চিন্তাতে পড়ে গেল। অপরিচিত একটা মানুষের কথাতে হুট্‌ করে যাওয়া কি ঠিক হবে? আজ বুথে সামান্য সময়ে অবশ্য তার মধ্যে খারাপ কিছু দেখা যায় নি। এটা হয়তো তার চাকুরীর ভদ্রতা ছিল। এতো অল্প দেখাতে অবশ্য মানুষ চেনা যায় না। কিন্তু শুধু তাকেই বিশেষ ভাবে সাহায্য করতে চাওয়ার কারণটা কি? মানুষ এমন এক প্রাণী যারা সচারচর কারণ ছাড়া কারো উপকারে এগিয়ে আসে না। তবে পৃথিবীতে এখনো ভালো কিছু মানুষ আছে। তাদের জন্যই পৃথিবীটা এখনো সুন্দর!


শূন্য পথিকের মূল পোষ্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment