Wednesday, May 8, 2013

শনির দশা এবং শনি দেবতা

God Saturn Chronos

অনেক সময় আমরা খারাপ সময় বোঝাতে ‘শনির দশা’ বা ‘শনিতে ধরেছে’ এই জাতীয় শব্দ ব্যাবহার করি। শনির সাথে জড়িয়ে আছে অশুভ সব ঘটনা, তাই শনি বিবেচিত হয়ে আসছে অশুভ এবং মানুষের জন্য অশান্তি, দুর্দশার প্রতীক হিসাবে। আসলে এই ‘শনি’ কি? কোথা থেকে এসেছে এই শব্দ? এই সব প্রশ্নের একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় গ্রিক পুরানে। 

গ্রিক পুরাণ মতে দেবতারা বিশ্বকে না, বিশ্বই সৃষ্টি করেছে দেবতাদের। আগে ছিল আদি জনক ও জননী। তাদের

সন্তানরা হচ্ছে টাইটান আর দেবতারা হলেন তাদের নাতি নাত্নী। টাইটানরা বড় দেবতাকূল। ক্রোনস প্রথম প্রজন্মের সর্বকনিষ্ঠ টাইটান, পিতা ইউরেনাসকে হত্যা করে দেবরাজ্য দখল করে ফেলে। তারপর তার পদ রক্ষার জন্য একে একে নিজের সব সন্তানকে খেয়ে ফেলে, কেবলমাত্র জিউসকে ছাড়া। রোমানরা যখন গ্রিস দখল করে ক্রোনসের নাম বদল করে স্যাটার্ন রাখে। স্যাটার্ন থেকে শনি গ্রহ (Planet Saturn) এবং Saturday বা শনিবারের নামকরন। পিতাকে ও নিজ সন্তানদের হত্যা এবং আরও অনেক রক্তপাত করার কারনে হয়তো এই দেবতার নামের সাথে খারাপ বা নেগেটিভ ধারনা চলে আসে। 

আরেকটি ধারনা পাওয়া যায় হিন্দু পুরানে। স্কন্দ পুরাণ মতে শিপ্রা ও ক্ষাতা নদীর সংযোগস্থলে জন্মগ্রহণ করেই শনি ত্রিলোক আক্রমণ করেন। আতঙ্কিত ইন্দ্র ছুটলেন ব্রহ্মার কাছে। নিরুপায় ব্রহ্মা সূর্যের কাছে । এর আগেই শনি দারা আক্রান্ত সূর্য ব্রহ্মাকেই উলটে শনিকে সংযত করার অনুরোধ করলেন। এবার ব্রহ্মা গেলেন বিষ্ণুর কাছে। নিরুপায় বিষ্ণু এবার শিবের দারে উপস্থিত। শিব শনিকে ডেকে অত্যাচার করতে বারণ করলেন। তখন শনি শিবকে তাঁর জন্য খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থানের উপায় করতে বললেন। তখন শিবই শনিকে মেষ থেকে মীন রাশিচক্রে সরব করে দিলেন। নিয়ম মত অষ্টম, চতুর্থ, দ্বিতীয়, দ্বাদশ ও জন্মরাশিতে শনি সর্বদাই ক্রুদ্ধ হবেন। কিন্তু তৃতীয়, ষষ্ঠ বা একাদশ স্থানে এলে তিনি উদার। পঞ্চম বা নবম স্থানে এলে তিনি উদাসীন। এই শনির আরেক নাম শনৈশ্চর। সন্তুষ্ট হলে তিনি লোককে দেবেন রাজ্য, অসন্তুষ্ট হলে নেবেন লোকের প্রাণ। শনির দৃষ্টি যার দিকেই পড়বে, তিনি দেবতাই হোন, বা দৈত্য, মানব, উপদেবতাই হোন, তার খবর আছে!! :P :P :P

আবার সবচেয়ে মজার কাহিনীটা বলে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ!! শনির জন্ম আদৌ কুদৃষ্টি নিয়ে না, বরং স্ত্রীর অভিশাপই তাঁর কাল! একদিন শনির ধ্যানের সময়, তাঁর স্ত্রী সুন্দর বেশভূষা করে এসে তাঁর কাছে কামতৃপ্ততা প্রার্থনা করলেন। এদিকে ধ্যানমগ্ন শনি কেয়ার না করাতে অতৃপ্তকাম শনিপত্নী তখন শনিকে অভিশাপ দিলেন, “আমার দিকে ফিরেও চাইলে না তুমি! যাও, অভিশাপ দিলাম, এরপর থেকে যার দিকেই চাইবে, সে-ই ভষ্ম হয়ে যাবে!” 

সেই থেকে শনি উগ্র দেবতা বলে কুখ্যাত। জ্যোতিষীদের মতে শনির কুদৃষ্টি অশুভ ফল নিয়ে আসে। দেবদেবী-পুরাণ যতই অবিশ্বাস করেন, অবচেতন মনে অথবা না জেনে ঠিকই আপনি স্যাটার্ন বা শনি দেবতার ভয়ে অস্থির!!
 

শুন্য পথিকের মূল পোস্ট>> 

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment