Saturday, May 18, 2013

অনুগল্পঃ মেয়েটি-০১


মেয়েটার সাথে আমার প্রথম দেখা এক বইয়ের দোকানে। দোকানে ঠিক না, দোকানের বাইরে, ফুটপাতে। প্রায় তিন দিন তন্নতন্ন করে খুঁজে একটা পুরাতন বই পাচ্ছিলাম না। আজ দোকানীর ফোন পেয়ে বইটা নিয়ে টাকা পরিশোধ করে দোকান থেকে মাত্র বের হয়েছি...
-Excuse me ভাইয়া!
পেছনে ফিরে দেখি ভিড়ের মধ্যে থেকে সুন্দর মত এক মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

-আমাকে বলছেন?
-জী! আপনার হাতে “আমুক” বইটা না?
-হুম! কেন?
-ভাইয়া, বইটা না আমার লাগবে! প্লিইইজ! গত কয়েকদিন ধরে খুউব খুঁজছি। পাচ্ছি না। ঐ দোকান থেকে বলল এক কপি পেয়েছে, যেটা মাত্র আপনি কিনে নিয়েছেন।

নাকে কান্না কথা শুনে মন গলে গেলেও বইটা দেওয়া যাবে না। আমি বললাম, তো? বইটা আমারও খুব দরকার। আমিও খুঁজছিলাম। আমার বোনের লাগবে। ওর পরীক্ষা।
-ভাইয়া, প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ! বইটা আমার কালকেই লাগবে, আর কোনও কপি হয়তো পাবো না। যে কোনো মূল্যে বইটা চাই... আমি আপনাকে না হয় টাকা......

মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মাঝপথে থামিয়ে বললাম, আপনার কি আমাকে দোকানদার মনে হয়? নাকি বুক সাপ্লায়ার? হুহ?
-সরি ভাইয়া! মাথা ঠিক নাই! কিছু মনে করবেন না। ঠিক আছে, আপনি আপনার কোনো যোগাযোগের নম্বর দেন, আমি কাল সন্ধায় ফোন করে বইটা আপনাকে দিয়ে আসবো। আমিও বসুন্ধরা আবাসিকের পাশেই থাকি। প্লিজ?

মেয়েটার জন্য মায়া হল, কিন্তু বইটা আমার ছোট বোনেরও খুব দরকার। বললাম- 
-দেখুন, বইটা আমারও খুব দরকার। দেওয়া যাবে না। তবে আপনি বরং একটা কাজ করুন, যে পেজ গুলো দরকার কপি করে নিন। আমি অপেক্ষা করছি।

মেয়েটা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বলল, তার মানে আপনি আমাকে বই দিচ্ছেন না?
-না, তবে কপি করতে চাইলে দিতে পারি।
-লাগবে না আপনার বই। তবে মনে রাখবেন, ঐ বই দিয়ে আপনার ভাল হবে না!
মেয়েটার মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে! 
আমি মুচকি হেসে বললাম, অভিশাপ দিচ্ছেন?
-হ্যাঁ! দেখবেন।
-আচ্ছা! শকুনের দোআতে গরু ...ম...রে...না!
-কি বললেন? >:(
-কিছু না। ভাল থাকবেন! :)
-Good For U! 
সে মুখ বাঁকা করে চলে গেল। আমিও বাসায় চলে আসলাম।

পরের দিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে আমার চক্ষু চড়ক গাছ! দেখি সেই মেয়েটা আমাদের বাসায়, ছোট বোনের সাথে গল্প করছে! আমাকে দেখে রাগে মুখ ঘুরিয়ে নিল! পরে বোনের মুখে যা শুনলাম তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না! মেয়েটা আমার ছোট বোনের বান্ধবী। আমি চিনি না, কিন্তু সে আমাকে চেনে। এটা দুই বান্ধবীর বাজি ছিল যে, বইটা যে কোনো মূল্যে আমার কাছে থেকে নেবে! বাজিতে হেরে তার মন খারাপ! ঘটনা শুনে মেয়েটির রাগ আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বেশ শব্দ করে হাসলাম! 
গতদিন সে আমাকে বলেছিল সে-ও বসুন্ধরার আশেপাশেই থাকে। আমার তখনি বোঝা উচিৎ ছিল আমি কোথায় থাকি সেটা তার জানার কথা না। নিশ্চয় সে পরিচিত। যাইহোক, বইটা না দিয়েই ভাল হয়েছে। নতুবা খোঁচা খেতে হতো যে, আমি সুন্দরী মেয়ে দেখে সব ভুলে বই দিয়ে দিয়েছি! :P :P

শুন্য পথিকের মূল পোস্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment