Tuesday, January 21, 2014

অনুগল্পঃ অভিমানী


বাবা-মা আর তারা দুই ভাই-বোন এই চারজন নিয়ে রিদিমাদের ছোট পরিবার। বাবা ছোট ব্যাবসা করেন, মা শিক্ষিকা এবং ভাই এবার এইচএসসি দিলো। মফস্বলের এমন একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিমানী মেয়ে রিদিমার হারিয়ে যাওয়া নিয়ে আজকের গল্প। রিদিমা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে, তার বয়স ১৫ কিন্তু রেজিস্ট্রেশনে একবছর কমিয়ে ১৪ করা হয়েছে। অর্থাৎ সে যে বয়সটা পার করছে রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের মতো পৃথিবীতে এমন ‘বালাই’ আর নাই! তার সমবয়সী অন্যদের ব্যাপার যেমনটা হোক না কেন, সে যে সবার কাছে ধীরে ধীরে ‘বালাই’ হয়ে উঠছে এটা সে ঠিক বুঝতে পারছে। হঠাৎ করে এই
বয়সের শারীরিক ও মানুষিক পরিবর্তন তার নিজের জন্য কাল হয়ে উঠেছে। তার এই মানুষিক পরিবর্তনটার মূল্য কেউ না দিলেও শারীরিক পরিবর্তনের মূল্যটা ঘরে বাইরে সবখানে পরিশোধ করতে হচ্ছে তার নিজেকেই। এই পরিবর্তন নিয়ে সে সারাক্ষণ বিব্রত থাকে। 

নিঃসঙ্গ রিদিমা ইদানিং খেয়াল করছে আশেপাশের কেউই তাকে আগের মত সহ্য করতে পারছে না। কিছু একটা করতে চাইলে মা ধমক দিয়ে নিষেধ করে দিচ্ছে। কিছু বলতে গেলে বাবা অথবা ভাইয়া বিরক্ত হয়ে থমিয়ে দিচ্ছে। বন্ধুদের সাথেও সম্পর্ক ঠিক ভালো যাচ্ছে না। এই সেই দিন ক্লাসে বসা নিয়ে বান্ধবীদের সাথে বেশ কথা কাটাকাটি হয়ে গেল। এখন তাদের সাথে চোখাচোখিও বন্ধ। কিন্তু রাস্তায় বের হলে শত কৌতূহলী চোখ তার দিকে আটকে থাকে। ছেলেদের আচরণে মনে হয় তার সবাই তাকে পেতে চায় কিন্তু কেউ তার পছন্দকে-অপছন্দের তোয়াক্কা করে না। 

শত মানুষের ভিড়ে আসলে এই মুহূর্তে রিদিমা একা। তার মনে হচ্ছে সে সবার শত্রু, পথের কাঁটা। এদিকে বাবা-মা ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে অথচ তার বেলাতে যত সমস্যা। তাছাড়া কিছুদিন হলো একটা ব্যাপার তার মাথায় ঘুরছে। ছোট বেলাতে পরিবারের সবাই মজা করে বলতো, তাকে নাকি হাসপাতালের বারান্দা থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছিলো! আসলেই কি তাই? বাবা-মা-ভাইয়ার ইদানিং সময়ের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে সে আসলেই কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে। একরাশ অভিমান নিয়ে সে তার কান্না চাপার চেষ্টা করল। অনেক চিন্তা করে দেখল, এমন কুড়িয়ে পাওয়া ‘বালাই’ হয়ে পৃথিবীতে থাকার কোনো মানে হয় না। 

ঠিক একদিন পর, দেশের সকল পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে একটা খবর আসল, ‘রিদিমা নামের ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে রহস্যজনক মৃত্যু! আত্মহত্যা নাকি...’ রিপোর্টারের ‘চিত্রনাট্য’ পড়ে অনেকের মন আদ্র হয়ে উঠলো, অনেকে নোনা পানিতে পত্রিকা ভিজিয়ে ফেললো, অনেকেই আবার প্রতিদিনের চায়ের সাথে একটা নোনতা বিস্কিট খেতে খেতে বেশ বিনোদিতও হলো! আর তার বাবা-মা-ভাই? থাক না তাদের কথা, আজ শুধুই রিদিমার গল্প। বয়ঃসন্ধিকালের চাপ এবং পরিবারের উদাসীনতা কাল হলো মেয়েটির। এভাবেই পত্রিকার প্রথম পাতা থেকে দুই-তিনটা ‘ফলো-আপ’ হয়ে নীরবে হারিয়ে গেল রিদিমা নামের একটি অভিমানী কিশোরী! 


শূন্য পথিকের মূল পোষ্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment