Sunday, January 5, 2014

অনুগল্পঃ অপ্সরীর গল্প


ছুটির দিনে সকাল সকাল টিউশনিতে যাচ্ছি। এই দিনেও লোকাল বাসের চাপাচাপির ঠ্যালাতে চ্যাপ্টা হওয়ার দশা। প্যান্ট পকেটে মোবাইলটা বেজে উঠল। দুই হাত উপরে তুলে কোনো মতে দাড়িয়ে আছি। হাত নামিয়ে যে মোবাইলটা বের করবো তার উপায় নেই। বাজুক... বাস থেকে নেমে ফোন দেওয়া যাবে। আবার বেজে উঠল... আবার...আবার... তার মানে নিরু ফোন করেছে। খুব বিপদ! কল না ধরা পর্যন্ত ফোন দিতেই থাকবে। কেটে দিলেও শান্তি নেই। আবার কল দিবে।
রিংটোনের শব্দে আশেপাশের মানুষ বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকাচ্ছে। একজন তো বিড়বিড় করে কী কী জানি বলল। বাধ্য হয়ে মাঝ রাস্তাতেই নেমে গেলাম। আজকে আর টিউশনিতে যাওয়া হবে না। কারণ এখান থেকে বাস পাওয়া যায় না। মোবাইলটা এখনো বেজেই চলেছে। রাস্তার পাশে একটা ঝুপড়ি দোকানে বসে ফোনটা বের করলাম। ঠিক নিরুই। 


-সাড়ে ১১ বার...
-তুই পারিসও! বল, কী বলবি?
-কী এমন মহাভারত উদ্ধার করছিলে এতক্ষণ?
-মহাভারত উদ্ধার করার ক্ষমতা আমার নেই এটা তুই ভালো করেই জানিস। নিজের পেট উদ্ধার করেই সময় পাই না আবার মহাভারত! আর তুই তো দিলি পেটে লাত্থি মেরে... আজ টিউশনিতে বেতন পাওয়ার কথা ছিল, তোর কলের যন্ত্রণায় বাস থেকে নেম আসলাম। এখন আর বাস পাবো না...
-চুপ থাকো! তুমি আগে তো এত বাচাল ছিলে না, এত বাচাল হলে কবে থেকে?
-জ্ঞান না দিয়ে ফোন দিয়েছিস ক্যান তাই বল!
-গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তোমার পেটে লাথি দিয়েছি না? সমস্যা নেই, বাসায় চলে আসো। তোমার ফুফু তোমার জন্য তালের পিঠা বানাচ্ছে!
-এইটা তোর গুরুত্বপূর্ণ কথা? হঠাৎ এত আয়োজন? তোর বিয়ে নাকি? বাসায় আসলে তুই কী খাওয়াবি?
-ইশ্‌ শখ কত! পিঠা খেয়ে বিদায়। আমার পরীক্ষা চলছে, আমি ব্যস্ত।
-তাইলে থাক! আজ আর আসবো না।
-না না না... আসো প্লিজ... প্লিজ। না আসলে আম্মা মন খারাপ করবে।
-আচ্ছা দেখি...
-দেখি না। একঘন্টার মধ্যে হাজির হও!
-আচ্ছা বাবা... একঘন্টার মধ্যে বান্দা হাজির থাকবে!
-ঠিক তো?
-আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা?
-আচ্ছা রাখলাম! তোমার সাথে বক বক করে আমার মোবাইলের টাকা শেষ!


লাইনটা কেটে গেল। নিরু আমার ফুফাতো বোন। বাবার দুঃসম্পর্কের এক বোনের মেয়ে। এইবার এসএসসি দেবে। এতিম আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ বলতে গেলে এই ফুফু আর নিরু। আমি জানি নিরুর পিঠা খাওয়ার দাওয়াত একটা বাহানা। আমি যে তালের পিঠা খাই না এটা ফুফু খুব ভালো করেই জানে। অনেক দিন ফুফুর বাসায় যাওয়া হয় না। তাই নিরুর সাথেও দেখা হয় না। তাই হয়ত এই বাহানা। নিরুকেও খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। নিরুকে কথা দিয়েছে এক ঘণ্টার মধ্যে বাসায় হাজির হবে। কথা দিলেই কথা রাখতে হবে এমন কোনো কারণ নেই। এখন যাওয়া যাবে না। নিরু অপেক্ষা করুক। 


আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, অপেক্ষা করতে করতে নিরু রাগে লাল হয়ে গেছে। এক সময় নিরাশ হয়ে ধরেই নিয়েছে আমি আর আসবো না। ঠিক তখনই সন্ধায় আমি গিয়ে উপস্থিত হবো। জানি আমাকে দেখে নিরু খুব খুশি হবে কিন্তু চোখ মুখে রাগ রাগ ভাব ধরে রাখার চেষ্টা করবে। নিরু যখন কপট রাগ দেখায়, তখন মেয়েটাকে আমার অপ্সরীর মত লাগে! 

শূন্য পথিকের মূল পোষ্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment