Sunday, January 5, 2014

অনুগল্পঃ তিথি


লিয়ানার কিছু দরকারি বই নীলক্ষেত থেকে কিনে নিউমার্কেটের ফুটওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছি। সে গেছে ছেলেকে নিয়ে মার্কেটের ভেতরে, ছেলের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে। হরেক রকম মানুষ হরদম চলাচল করে এই ফুটওভার ব্রিজের উপর দিয়ে। সব সময় ভিড়। তার ওপর ভ্যাপসা গরমে সেদ্ধ হওয়ার দশা। মোবাইলটা বের করে লিয়ানাকে একটু তাড়া দিলাম। শপিং এর ব্যাপারে মেয়েদের তাড়া দিয়ে লাভ নাই। ফোনটা কেটে দিয়ে পেছন দিকে একটা কণ্ঠে চমকে গেলাম!
-আরে, আবীর ভাই যে!
-এই শুভ! কী অবস্থা?
-অবস্থা ভালো। আপনি এখানে, এই সময়?
-তোমার ভাবী গেছে মার্কেটের ভেতরে আমি কিছু বই কিনে মাত্র দাঁড়ালাম। তোমাদের আর কী খবর? তিথি কেমন আছে?
-ঐ দেখেন আপু, ওখানে!
পেছনে একটু দূরে যে তিথি দাঁড়িয়ে আছে খেয়ালই করি নি। সেই অনেক দিন পরে আবার দেখা। তিথির সংকোচ দেখে বুঝলাম সে অতীতের ঘটনা গুলো এখনো ভুলতে পারে নি। তবে সব ঘটনার জন্য সে নিজেই দায়ী। শুনলাম ওর এখনো বিয়ে হয় নি। চেহারাও অনেক খারাপ হয়ে গেছে। একটা সময় ক্যাম্পাসের সেরা সুন্দরীদের মধ্যে তার নামটা আসতো। মেয়েটা নিজের ভাগ্যকে নিজেই পায়ে ঠেলেছে। এর মধ্যে লিয়ানার শপিং শেষ। ছেলে আবার তার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। তিথিদের বাসায় আসতে বলে দ্রুত বিদায় নিলাম।


তিথির সাথে আমার পরিচয় জামিল ভাইয়ের মাধ্যমে। একটা সময়ে আমাদের ক্যাম্পাসে তুমুল জনপ্রিয় জুটি ছিল জামিল ভাই আর এই তিথির জুটি। জামিল ভাই আমার রুমমেট হওয়ার সুবাদে তাদের অনেক হাড়ির খবরও আমি জানতাম। জামিল ভাই আমার সিনিয়ার হলেও তিথি আমার জুনিয়ার। ওকে আমরা এক নামে ভাবী বলে ডাকতাম। তিথি ক্যাম্পাসের বাইরেও ভাইয়ের কাছে আমাদের ফ্ল্যাটে যাতায়াত করত। তাকে রুম পর্যন্ত নিয়ে আসার দায়িত্ব ছিল আমাদের কয়েকজনের উপর। সে আসার পর আমাকে কয়েক ঘন্টার জন্য রুম ছেড়ে অন্য রুমে যাযাবর হয়ে যেতে হতো। অবশ্য সেই ক্ষতিটা পুষে যেত পেট পূজা দিয়ে! সে কখনোই খালি হাতে আসতো না। সাথে নিজের রান্না করা কিছু না কিছু থাকত। আর খালি হাতে আসলেই বা কী! জামিল ভাই আছেন না! এই সময় তিনি কেন জানি দিল দরিয়া হয়ে যেতেন!

তো সব কিছু ভালই চলছিল। জামিল ভাই পড়াশুনা শেষ করে একটা চাকুরিও জুটিয়ে নিলেন। দুই পরিবার তাদের এই সম্পর্কের ব্যাপারে আগে থেকেই জানতো। তিথির পরিবারে এই নিয়ে অনেক ঝামেলাও হয়েছিলো। ছেলের পরিবার, লেখাপড়া, চাকুরি আর মেয়ের কথা চিন্তা করে তিথির পরিবার এই সম্পর্কের ব্যাপারে সেই সময় নরম হয়ে গিয়েছিল। এই সুযোগে জামিল ভাই পারিবারিক ভাবে বিয়ের প্রস্তাবও পাঠিয়ে দিলেন। অনাকাঙ্খিত বোমাটা ঠিক তখনই ব্লাস্ট হল! মেয়ের পরিবারে সবাই রাজি কিন্তু বেঁকে বসলো তিথি নিজেই! যে ছেলের জন্য সে একটা সময় পরিবারের সাথে যুদ্ধ করেছে হঠাৎ সে সেই ছেলেকে বিয়ে করতে নারাজ। জামিল ভাই, আমরা সবাই সাথে তার নিজের পরিবার কিছুতেই তিথির মুখ দিয়ে ‘না’ বাদে একটা শব্দ বের করতে পারলাম না। জামিল ভাই ক্ষেপে উঠলেন! সাত দিনের মধ্যে অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করবেন বলে ঘোষণা দিলেন। তিথি তখনও নিমরাজি! শেষ পর্যন্ত তিথির পরিবার তার এই অচরনে বিরক্ত হয়ে তিথির ছোট বোন তনুর সাথে জামিল ভাইয়ের বিয়ের কথা তুললেন। তবুও তিথি চুপ। প্রথম দিকে জামিল ভাই এই বিয়ের ব্যাপারে রাজি না থাকলেও পরে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজি হয়ে গেলেন। এক দিনের মাথায় অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে তার আর তনুর বিয়ে হয়ে গেল। এরপর জামিল ভাই তার গ্রামের বাড়িতে ধুমধাম করে একটা অনুষ্ঠান করে বউকে নিয়ে ঢাকা চলে আসলেন। 

এখন জামিল-তনু দম্পতি উত্তরার একটা ফ্লাটে সুখে সংসার করে চলেছে। তাদের একটা ফুটফুটে মেয়েও আছে। জামিল ভাই কখনো শ্বশুর বাড়ি যান না, তনু ভাবীও তার বাবার বাড়িতে খুব একটা যায় না। আর তিথির তখন হঠাৎ বেঁকে যাওয়ার কারণ আজও কেউ জানে না। এই জন্যই হয়ত কথাতে আছে, তিথিদের মন স্বয়ং বিধাতাও বুঝতে পারেন না!


শূন্য পথিকের মূল পোষ্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment