Tuesday, January 21, 2014

অনুগল্পঃ এপিঠ-ওপিঠ


জমি সংক্রান্ত ঝামেলার জের ধরে তিক্ততার শুরু। চার ভাই এক দিকে আর বৃদ্ধ বাবা একা এক দিকে। ছেলেদের জমে থাকা রাগের প্রকাশ ঘটলো এক রোজার দিন দুপুরে। কথা কাঁটাকাটির এক পর্যায়ে বড় ছেলে জহির ক্ষিপ্ত হয়ে তার বাবাকে ধাক্কা দিল। বৃদ্ধ বাবা যুবক ছেলের ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলেন। মাথাটা গিয়ে লাগলো একটা খুঁটির সাথে। জহিরের রাগ তাতেও কমে না, পারলে বাবাকে আরও কয়েকটা লাগিয়ে দেয়! কিন্তু বাইরের দুই
একজনের বাঁধাতে তার মনোবাসনা অপূর্ণ থেকে গেল। অপমানিত বাবার কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। এবার আসল ঘটনাতে আসি- কাকতালীয় কিনা জানি না তবে এই ঘটনার দুই দিন পরে জহির হঠাৎ স্ট্রোক করল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিভাগীয় মেডিকেলে শিফট করতে করতে তার বাম দিকের অংশ অবশ হয়ে গেল। টানা ১০ দিন হাসপাতালে থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও জহির এখনো একা একা চলা ফেরা করতে পারে না। এক অর্থে তাকে এখন পঙ্গু বলা চলে।

দুই.
জমিরন বেওয়া মারা যাওয়ার আগে ছেলে আনিসকে বলেছিলেন, 
"বাবা, তোর জন্য আমি কিছু রেখে যেতে পারলাম না কিন্তু তোর উপরে আমি খুশি, আল্লাহ্‌র কাছে তোর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করলাম।"
মায়ের জন্য আনিস যা করেছে এটা দেখলে আসলেই অনেকে অবাক হয়ে যেত। তার বৃদ্ধ মা অসুস্থ হয়ে প্রায় ২ বছর বিছানাতে পড়ে ছিল। এই দুইটা বছর আনিস নিজেই মাকে গোসল করিয়ে দিত, তিনবেলা মুখে তুলে খাইয়ে দিত, ওষুধ খাইয়ে দিত, এমনকি মায়ের পেশাব-পায়খানা গুলোও নিজের হাতে পরিষ্কার করত। ঠিক মা যেভাবে একটা সন্তানকে বড় করেন সেই ভাবে সেও তার মায়ের সেবা করত। তার স্ত্রী মাঝে মাঝে সাহায্য করতে চাইলে অথবা একটা কাজের মানুষ রাখতে চাইলে আনিস বলতো, 
"মা তো তোমার বা অন্য কারো না। মা হচ্ছে আমার নিজের। তাঁর কাজ গুলো করে আমি শান্তি পাই। আমার কাজ আমাকেই করতে দাও। তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করো।"
এভাবেই সে মায়ের মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে মায়ের সেবা করার চেষ্টা করেছে। মায়ের জানি একটু কষ্ট না হয় সেই দিকে খেয়াল রেখেছে। এই কারণে ছেলের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন জমিরন বেওয়া। হাদিসে আছে মায়ের দোয়া নাকি কখনো বিফলে যায় না। আনিসের ক্ষেত্রে সম্ভবত এটা সত্যি হয়েছে। পরম করুণাময় তার মায়ের দোয়া কবুল করেছেন। এরপর থেকে জীবন চলার পথে তাকে আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সে আজ একজন সফল ব্যাবসায়ী।


[ পৃথিবীর সকল বাবা-মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ]

শূন্য পথিকের মূল পোষ্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment