Thursday, July 18, 2013

অনুগল্পঃ ছোটলোক


এক.
এশার নামাজ শেষ করে জমিরুদ্দীন সরদার কালুর কাছে এক গ্লাস পানি চাইলেন। আজ তার গলাটা বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে। কালু পানি নিয়ে প্রস্তুত ছিল। কালু জমিরুদ্দীন সরদারের ডান হাত। সে সব সময় তার সাথে ছায়ার মত থাকে। পানি দিয়ে তার চলে যাওয়ার কথা, কিন্তু সে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে সে কিছু বলতে চায়। জমিরুদ্দীন সরদার কালুকে গুরুত্ব দিলেন না, তিনি কাঁচের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছেন। কালু দাঁড়িয়ে আছে থাক। দাঁড়িয়ে থাকাই তার কাজ। তিনি কিছু জিজ্ঞাসা না করলে কালু কিছু বলবেও না। পানির মধ্যে একটা ছোট্ট কালো কুটি দেখা যাচ্ছে। পানিটা ফেলে কালুকে নতুন পানি আনতে বললেই সে আনবে কিন্তু বলতে ইচ্ছে করছে না। কুটিটা ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে...যাক। তলিয়ে গেলে তখন পানিটা খাওয়া যাবে।

 
-কালু! কিছু বলবা? তুমি কি বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত?
-জী-না সরদার সাহেব! বাইরে বৈঠকখানায় সবাই আপনার জন্য বসে আছে।
-কুত্তাটা কই? ওরে কই রাখছ?
-ছোট সাহেবরে ঘরে তালা দিয়া রাখা হইছে।
-ভাল করেছো। রহমান তার মাইয়া নিয়া আসছে?
-জী সরদার সাহেব।
-বুঝলা কালু, হাতি যখন গর্তে পড়ে তখন চামচিকার পা ধরা লাগে! আমি গর্তে পড়েছি আর রহমান হইলো গিয়া চামচিকা। এখন রহমানের পা ধরতে হবে!
-সরদার সাহেব, আপনি হইলেন গিয়া আমার মত এই সব ছোট লোকের বাপ-মা! আপনার উপর দিয়া কথা কইবো এমন মানুষ এই তল্লাটে নাই। আপনি যেমনে কইছেন ঠিক সেই ভাবেই কাম হইবো। রহমান আর তার মাইয়া রমিলা ‘টু’ শব্দ করবো না। ওদের সব বুঝায়ে দেওয়া হইছে। আপনি কোনো চিন্তা কইরেন না।


কালুর কথায় জমিরুদ্দীন সরদার নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই সব ছোট লোকের কথায় কোনো বিশ্বাস নাই! সব ভালই ভালই মিটে গেলে তিনি নিজে তার ছেলের বিচার করবেন। আপাতত সে তালা বন্ধ থাকুক। তিনি চিন্তিত মুখে বৈঠকখানার দিকে পা বাড়ালেন।

দুই.
জমিরুদ্দীন সরদারের বৈঠকখানায় মধ্যরাত পর্যন্ত বিচার চললো। সরদারের সাহেবের পূর্ব পরিকল্পনা মতই সব হল। গ্রামের বেশ কয়েক জন সাক্ষী দিল যে, তারা গত রাতে কালুকে রমিলার ঘর থেকে বের হতে দেখেছে! কালু অপরাধী ভঙ্গিতে সব স্বীকার করে নিল। তবে রমিলাও নিষ্পাপ না! সেও কালুকে প্রলোভন দেখিয়েছে! তাই একক ভাবে কালুকে দোষী বলা যাচ্ছে না! দুজনেই সমান দোষী! 
রাতেই কাজী ডেকে কালু-রমিলার বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হল। বিয়ের সব খরচ অবশ্য জমিরুদ্দীন সরদারের। তাদের দু’জনের সংসারে মঙ্গল কামনা করে অনেক সময় ধরে মোনাজাত করা হল। মোনাজাত শেষে জমিরুদ্দীন সরদার তার দীর্ঘ দিনের বিশ্বস্ত কালুর বিশ্বস্ততার ইনাম স্বরূপ উত্তর মাঠে দুই বিঘা মাঠান জমি উপহার দিলেন! জমিরুদ্দীন সরদারের দান ক্ষমতার বাহবা দিতে দিতে উপস্থিত সবাই বাড়ি ফিরে গেল! 

তিন.
মাত্র দুই বিঘা জমির বিনিময়ে জমিরুদ্দিন সরদারের একমাত্র সন্তান আলিমুদ্দীন সরদারের যৌবন বয়সের একটা পাপ কাটা গেল! জমিরুদ্দীন সরদার খুশি, তার একমাত্র ছেলে আলিমুদ্দীন সরদার খুশি, কালু খুশি, সবাই খুশি! এমন কি রমিলার বাপকেও হাসি মুখে মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত দেখা গিয়েছিল! ‘ছোটলোক’ রহমানকে তখন কি দিয়ে খুশি করা হয়েছিল এটা অবশ্য জানা যায়নি! সাথে রমিলার মনের খবরটাও সবার অজানা। রমিলার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ দেখার সময় তাদের নেই। ছোট লোকদের আবার হৃদয় বলে কিছু আছে নাকি? 

শূন্য পথিকের মূল পোস্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment