Wednesday, July 31, 2013

অনুগল্পঃ টিনএজ বিড়ম্বনা


আচমকা গালে ঠাশ করে চড় খেয়ে রায়ান চেয়ার থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল! পড়তে বসার পর থেকেই কেমন জানি ঘুম ঘুম লাগছিলো। এক চড়েই ঘুম গায়েব! বাপ মানুষটা না একটা পাষাণ! ঘুমের অপরাধে এই ভাবে কেউ আচমকা চড় মারে? আর শালার প্লাস্টিকের চেয়ার গুলোও যে এমন...! বাপের হাতে মার খেলে সমস্যা নাই কিন্তু চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে যাওয়াতে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেল! ছোট বোন মুখ টিপে হাসছে! বাবা মনে হচ্ছে আজকে একটু বেশিই খেপেছে! ঘটনা কী? দাদিও আবার আজকের দিনটাতে বাড়িতে নেই! তিনি থাকলে বাবাকে এক ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতেন! আজ সম্ভবত রায়ানের কেয়ামত! সে ইসলাম শিক্ষা বইয়ে কেয়ামত ব্যাপারে পড়েছে। খুব ভয়ংকর ব্যাপার! মিজান সাহেব পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে তার স্ত্রীকে দেখিয়ে বললেন, 
‘দেখেছ! হারামজাদার কাজ দেখেছ? সোবহান সাহেবের ছোট মেয়েকে এই হারামজাদা আজ প্রেমপত্র দিয়েছে! হারামজাদার সাহস কত বড়! এই বয়সেই কিনা প্রেম... প্রেমপত্র!’

বলতে বলতেই মিজান সাহেব রায়ানের গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দিলেন! রায়ানের মা চিঠিটা স্বামীর হাত থেকে নিয়ে নিলেন। চেয়ারটা মেঝে থেকে তুলে স্বামীকে বসাতে বসাতে বললেন,
‘তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো তো! ছোট মানুষ... ভুল করেছে...’
‘ভুল করেছে তাই না? আর ছোট? চিঠির ভাষা দেখলে তো ছোট মনে হয়না! পড়েই দেখো না!’



মা সাথে সাথে চিঠি পড়া শুরু করল। আরে! মাকে নিয়ে আর পারা গেল না! বাবা পড়তে বললেই ছেলের সামনেই ছেলের প্রেমপত্র পড়া শুরু করতে হবে! লজ্জাই রায়ানের গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছা করছে! ঘটনা তবে নিলুকে দেওয়া চিঠি নিয়ে। সে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় চিঠিটা নিলুকে দিয়েছিল। কাল হোমওয়ার্ক করার সময় নিলুর জন্য অনেক যত্নে চিঠিটা লিখেছিল। সে আর নিলু একই স্কুলে পড়ে। সে ক্লাস সেভেনে আর নিলু ক্লাস সিক্সে। মেয়েটা নিশ্চয় তার বাবার হাতে চিঠি সহ ধরা খেয়েছে! কিন্তু চিন্তার বিষয় এটাই একমাত্র চিঠি না! বেশ কিছুদিন ধরে তাদের প্রেম চলছে। দু'জনের মধ্যে বেশ কিছু চিঠিও আদান প্রদান হয়েছে। তবে আশার কথা, মিজান সাহেবের হাতে আর চিঠি দেখা যাচ্ছে না! 
‘দেখো! হারামজাদার কাজ দেখো! চিঠিতে বাপের নাম ধরে লিখেছে! ‘মিজান!’ কত্ত বড় সাহস! আরে মিজান তোর বাপ, এটা ভুলে গেছিস?’
‘আর বানানের অবস্থা দেখো! একটা এতটুকু চিঠিতে ৯টা বানান ভুল! ঐ হারামজাদা, আমি তোকে এইজন্য পড়াশুনা শিখাচ্ছি?’

রায়ান মাথা নিচু করে আছে। বানান ভুলের ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পারলেও চিঠিতে সে তার বাবাকে ‘মিজান’ সম্বোধন করেছে এটা ঠিক! বাবার উপরে রায়ানের যখন খুব রাগ হয় তখন সে মনেমনে তার নাম ধরে ডাকতে থাকে! চিঠি লেখার সময় কোনো কারণে নিশ্চয় বাবার ওপর রাগ ছিল। সে কারণটা মনে করার চেষ্টা করছে, ঠিক মনে পড়ছে না। কিন্তু আশ্চর্য! এমন বিপদের সময়ে সে নিলুর কথা ভাবছে! নিলুর কথা ভাবতে তার ভাল লাগছে! মিজান সাহেব এখনো বকেই চলেছেন! তার সমস্যা কি হ্যাঁ? নিলুকে চিঠি দেওয়া নাকি বানান ভুল লেখা? জাহান্নামে যাক সব! রায়ান মনে মনে ভাবছে, মিজান সাহেব আর সোবহান সাহেব দুই জনই হচ্ছে জাত খাটাশ! তারা থাকুক তাদের মত। সে সিধান্ত নিয়ে ফেলেছে আর একটু বড় হলে নিলুকে নিয়ে সে অন্য কোথাও পালিয়ে যাবে! চিন্তা করতে করতে রায়ানের হঠাৎ বাবার চোখে চোখ পড়ে গেল! ঠাণ্ডা দৃষ্টি! এই যা, বাবা কি বুঝতে পারলো নাকি? আসলে এই বাবা-মাদের একটুও বিশ্বাস নাই! এরা কিভাবে যেন সন্তানদের মনের কথা ঠিক বুঝে ফেলেন!

শূন্য পথিকের মূল পোষ্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment