Wednesday, July 31, 2013

পিশাচের দল


[[লেখাটা সবাইকে মন দিয়ে পড়তে অনুরোধ করছি। আমাদের চারপাশের কিছু সত্যি ঘটনা]]

প্রথম সন্তান ছেলে, দ্বিতীয় সন্তানও ছেলে কিন্তু জন্মের কয়েক মুহূর্ত পর ছেলেটি মারা যাওয়া এক দম্পতির পরবর্তীতে একটা মেয়ের জন্য আর্তনাদ আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। সন্তান গর্ভে আসার পর থেকেই স্বামী স্ত্রীর মনে একটাই কামনা সুস্থ স্বাভাবিক একটা মেয়ে। দুঃখজনক হলেও সত্যি এখনো আমাদের সমাজে মেয়ে হওয়ার কথা শুনলে অনেকেই খুশি হয়না! কিন্তু এই দম্পতি আলাদা। মেয়ের জন্য তাদের আক্ষেপ অপেক্ষার কারণে তারা অনেকের কাছে ঠাট্টার পাত্র হয়েছেন। তবুও উপরওয়ালার কাছে এবার তাদের চাওয়া মেয়ে! আল্ট্রাসানোগ্রাফি করে ডাক্তার শুধু জানতে চাইলেন, ‘প্রথম সন্তান ছেলে না মেয়ে?’ ছেলে শুনে ভাঙা ভাঙা বাংলাতে ডাক্তার বললেন, “চিন্তা করবেন না, পেটের সন্তান ভাল আছে। বাঁকি গডের ইচ্ছা!” ‘ডাক্তার কেন কিছু বললেন না’ এটা নিয়ে সেই দম্পতির ঘুম হারাম!

ঘটনা প্যাঁচ লাগলো এর কিছুদিন পর ... এক পীরবাবা তাদের জানিয়েছেন এবারও ছেলে হবে! তাদের মুখের দিকে তাকানো দায় হয়ে গেল! তবে আল্লাহ্‌ তাদের দোয়া কবুল করলেন। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তাদের একটি সুস্থ স্বাভাবিক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়! মেয়ে হওয়াতে এত খুশি হতে আমি আমার জীবনে আর কাউকে দেখিনি!

দুই.
বিয়ের প্রায় ১০-১২ বছর হয়ে গেল। সন্তান হয় না। পরিবারের কানাকানি পড়ার মধ্যেও চলে গেল, ‘বউটা মনে হয় বাঁজা!’ এই দম্পতি আগে থেকেই বিভিন্ন উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে চেষ্টা করছিলেন। সমস্যাটা আসলেই বউয়ের। ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর পরিবার থেকে ছেলেকে অনেক চাপ দেওয়া হয়েছে আরেকটা বিয়ে করানোর জন্য। কিন্তু কারো কথাতে মাথা পাতেননি তিনি। তার একটাই কথা, সমস্যাটা যদি তার স্ত্রীর না হয়ে, তার নিজের হতো? যাক সে কথা। এই দম্পতিকে আমি একটা সন্তানের জন্য ছুটে বেড়াতে দেখছি নানা জায়গাতে। সন্তান লাভের আশায় যে যা বলেছে তাই করেছেন। এই ডাক্তার থেকে ঐ ডাক্তার, এই পীর থেকে ঐ পীর! কিন্তু সব বিফল। সব আশা শেষে তার একটা সন্তান দত্তক নিয়েছেন। রক্তের সম্পর্ক না হলে কি হবে? এখন ঐ সন্তানই তাদের কলিজার টুকরা!


তিন.
ফজরের আযানের পরপর এক বুড়ি ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে গাওয়ালে বেরিয়েছে। রোদ উঠার আগেই বাড়ি ফিরতে হবে। দ্রুত পথ হাঁটে বুড়ি। এমন সময় রাস্তার পাশে আখের জমির মধ্যে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। ভয় পেয়ে যায় সে! কিন্তু সন্তানহীন মায়ের মন তো। কেঁদে ওঠে। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যায়। দৃশ্যটা এত ভয়াবহ হবে বুড়ি কল্পনা করতে পারেনি। একটা গর্তের মধ্যে সদ্য জন্মানো শিশু কাঁদছে! ঠিক মত সব মাটি চাপা দেওয়া হয়নি। সম্ভবত বুড়ির সাড়া পেয়ে কেউ একজন বাচ্চাটা রেখে পালিয়েছে। বুড়ি তাকে বুকে তুলে নেয়। দুই একদিন পরে বাচ্চাটার ব্যাপারে জানাজানি হয়ে গেলে বুড়ি সবাইকে বলে সে কোথাও থেকে বাচ্চাটা দত্তক নিয়েছে। সবাই বিশ্বাস করে। ভিখারি বুড়িকে আর কেউ এই ব্যাপারে ঘাটায় না! গর্ত থেকে বাচ্চাটা তুলে বুড়ি সেই ভোরে একটা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। সত্যটা শুধু সেই ডাক্তার, বুড়ি নিজে আর যারা জীবিত দাফন পাপের সাথে যুক্ত ছিল তারা ছাড়া সম্ভবত আর কেউ জানেনা। ডাক্তারটি আমার কাছে একজন হওয়াতে অনেক পরে আমি ব্যাপারটা জানতে পারি। বুড়ি মারা গেছে সেই কবে। তার দত্তক নেওয়া সন্তান এখন দুই সন্তাদের বাবা।

চার.
এবারের ঘটনাটা পত্রিকাতে পড়েছিলাম সম্ভবত। পুরাটা মনে নেই। তবে ব্যাপারটা এমন, সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে রাতে এক মহিলা বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির পথে একটা বাঁশ বাগান পড়ে। বাঁশ বাগানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন হঠাৎ তিনি একটা বাচ্চার কান্না আর কুকুরের চিৎকার শুনতে পান! ভয় ভয় লাগলেও তিনি আলো হাতে এগিয়ে যান। দৃশ্যটা দেখার জন্য তিনি মোটেই তৈরি ছিলেন না! একটা সদ্য জন্মানো বাচ্চা বাঁশ বাগানে পড়ে কাঁদছে আর কয়েকটা কুকুর বাচ্চাকে ঘিরে রেখে চিৎকার করে চলেছে! সম্ভবত আশেপাশের শেয়াল বা হিংস্র পশু থেকে বাচ্চাটিকে বাঁচানর জন্য কুকুর গুলো সুন্দর গোল হয়ে অবস্থান নিয়ে চিৎকার করছিল। কুকুর গুলোকে সফল বলতে হয়! উদ্ধার করে মহিলা বাচ্চাটিকে এক নিসন্তান দম্পতির কোলে তুলে দেন।


পাঁচ.
কাল রাতে ফেসবুক ঘুরতে ঘুরতে MMC পড়ুয়া নিসা রহমান‘র ফেসবুকে আপলোড করা একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল! উনার নিজের হাতে তোলা ছবি সাথে ক্যাপশন। আমাদের সমাজেরই অন্ধকার একটা অধ্যায় সবার সামনে তুলে ধরার জন্য উনাকে ধন্যবাদ। দৃশ্যটা ছিল এমন, ‘একটা সদ্য জন্মানো মৃত কন্যা সন্তান পড়ে আছে। মাথাটা সম্ভবত আগেই কিছুতে খেয়ে নিয়েছে, একটা কাক এসে সেই ক্ষত স্থানে ঠোকর দিচ্ছে!’  আমার জীবনে দেখা সবচে বীভৎস দৃশ্য! কেন জানি চোখে পানি চলে আসলো! আমি ফেসবুক ছেড়ে বারান্দায় চলে আসলাম। কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম না। এই কাজ হয়ত আমার মত মানুষ গুলোই করে। তো আমাদের পাপের শাস্তি কেন ঐ নিষ্পাপ প্রাণ গুলো ভোগ করবে? মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কি ভাবে? একটা সন্তানের জন্য চারেদিকে এত আক্ষেপ আর আরেক দিকে নিষ্পাপ প্রাণ গুলোকে গলা টিপে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে! এ কেমন মানব জন্ম? সমাজও এই দায় এড়াতে পারে না।

জীবিত বাচ্চা মাটি চাপা দেওয়া হায়েনা গুলো, বাঁশ বাগানে জীবিত বাচ্চা ফেলা যাওয়া পশু গুলো, MMC তে মৃত বাচ্চা ফেলে যাওয়া পিশাচ গুলো এবং এমন অনেক কিছু অন্ধকারে চাপা দেয়া সমাজ... তোদের বলছি, “এত লজ্জা, এত সন্মানের ভয়.. পৃথিবীর আলো দেখতে দিবি না তো জন্ম দিলি কেন? সময় মত মনে ছিল না? কোথায় ছিল এই লজ্জা? কোথায় ছিল এই ভয়? 
ওরে পিশাচের দল! তবে যা, তোদের চেয়ে ঐ কুকুর জন্মই সার্থক!”

শূন্য পথিকের মূল পোষ্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment