Friday, July 5, 2013

অনুগল্পঃ মায়া


মায়ের কথা মনে আসলেই নিতুর ঘেন্না লাগে! রাহেলা বেগম মা হিসেবে হয়ত খুব একটা খারাপ ছিল না কিন্তু মানুষ হিসেবে সে জঘন্য! তাই নিতু কখনো তার কথা ভাবতে চায় না। কিন্তু শেফা ছোট মানুষ। ও মাঝে মধ্যেই মায়ের কথা জানতে চায়। ‘আপা, আমার মা কোথায়?’ ‘মা দেখতে কেমন ছিল, আপা?’
-শেফা, আমার সামনে আর কক্ষনো তার কথা বলবি না!
-কিন্তু কেন আপা? সবার মা আছে শুধু আমার মা নেই কেন আপা?
-উফ্‌! এই মেয়েটা এত প্রশ্ন করতে পারে! তোর মা মারা গেছে!
-মারা গেলে মানুষ কোথায় যায় আপা?


নিতুর মায়া হয়। শেফার বয়স ৫ বছর। ওর তো কোনো দোষ নেই। নিতু ওকে কাছে টেনে নেয়। কোলের উপর মাথাটা নাড়তে নাড়তে বলে,
‘শোন লক্ষ্মী বোন, মারা গেলে অনেক দূরে চলে যায়। ওখান থেকে আর ফিরে আসে না। তোর মাও আর আসবে না। তাতে কি? আমি আছি না? আমি তোকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবো না। তুই আর মায়ের কথা বলিস না’

শেফাটা হয়েছে বাবার মত। শান্ত সহজ সরল। শেফা লক্ষ্মী মেয়ের মত চুপ চাপ ঘুমিয়ে গেল। নিতু শেফাকে সব সময় মিথ্যা বলে। রাহেলা বেগম মারা যায়নি, সে তার দুই মেয়ে আর স্বামীকে ফেলে স্বামীরই এক ধনী বন্ধুর হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। রাহেলা বেগম যখন নিতুদের একা ফেলে চলে যায় তখন নিতুর বয়স কত হবে? পাঁচ কি ছয়, আর শেফার মাত্র দুই বছর। ছয় বছরের নিতু তখন অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছিল। বাবার বন্ধু আনিস আঙ্কেলের প্রায় প্রায় এই বাড়িতে আসা নিতুর পছন্দ হতো না। বাবা যখন অফিসে যেতেন তখন দুপুরের দিকে আনিস সাহেব আসত। আসার সময় নিতুর জন্য চিপস্‌- -লজেঞ্চ, শেফার জন্য খেলনা আনতেন। আনিস সাহেব নিতুদের যতটুকু হেল্প করত, নিতুর দরিদ্র বাবার কখনোই সাধ্য ছিলনা তার পরিবারের জন্য এত কিছু করার। 

আনিস সাহেব যখন আসত রাহেলা বেগমকে তখন অনেক হাসি খুশি দেখা যেত। নিতু বড় হতে লাগলো, অনেক কিছু বুঝতে শুরু করল। শেষের দিকে আনিস সাহেবের এ বাড়িতে আসাটা যে সে পছন্দ করত না, এই ব্যাপারটা রাহেলা বেগম বুঝতে পেরেছিল। তাকে সেই সময় অনেক চিন্তিত দেখাত। হয়ত মেয়েরা বড় হয়ে যাচ্ছে এই চিন্তা। 
না, মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার তেমন চিন্তা ছিল বলে মনে হয়না। তিনি চিন্তা করতেন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে। দরিদ্র স্বামীর পরিবারে দুই সন্তানের মায়া নাকি ধনী প্রেমিকের আশ্রয়? রাহেলা বেগম সিদ্ধান্তটা নিতে দেরি করেনি। একদিন পরিবারের মায়া উপেক্ষা করে নিজের সুখের জন্য প্রেমিকের হাত ধরলেন। সেই দিন থেকে নিতুর কাছে রাহেলা বেগম মৃত।
প্রেমিক শব্দটা রাহেলা বেগমের সাথে ঠিক যাচ্ছে না! তবুও ‘মা’ তো! রাহেলা বেগমের জন্য এর চেয়ে কঠিন কিছু নিতুর মাথায় আসে না!

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment