Thursday, July 18, 2013

একজন হুমায়ূন ভক্ত বলছি!


আমার হাতে একটা বই। হুমায়ূন আহমেদের 'তেঁতুল বনে জোছনা'/ মাত্র বইটা পড়ে শেষ করলাম। অদ্ভুত সুন্দর লাগলো! আবার পড়ে ফেললে কেমন হয়? আবার শুরু করলাম। শেষও হয়ে গেল কিন্তু ততক্ষণে ভোর হয়ে গেছে! অসম্ভব ভাল লাগা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। আশ্চর্য জনক ভাবে মতি মিয়াকে স্বপ্ন দেখলাম! আমি আর মতি মিয়া 'ডাহুক' পাখি কুড়াচ্ছি! ঘুম থেকে উঠলাম অন্য রকম ভাল লাগা নিয়ে। পাশে আরেকটা বই ছিল 'এই শুভ্র! এই' ওটাও পড়ে ফেললাম। প্রথম বারের মত সে দিন কলেজ মিস হয়ে গেল! শুভ্রর জন্য মায়া লাগলো কিন্তু মতি মিয়াকে ভুলতে পারলাম না। নবনী, আনিস, শুভ্রকে ছাপিয়ে এক অশিক্ষিত জোকার দার্শনিক (!) আমার মনে দাগ কেটে গেল! আশ্চর্য না?
 
এতক্ষণ বলছিলাম আমার পড়া প্রথম হুমায়ূন আহমেদের কথা। আজকের পাঁড় হুমায়ূন ভক্তের হুমায়ূন উপন্যাস 'হাতে খড়ি' খুব বেশিদিন আগের না। পরিবারের সবার কাছে শুনে এসেছি উপন্যাস নাকি বড়দের জন্য। আর হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস! সর্বনাশ!! ১৮ বছর না হলে তো ছুঁয়েই দেখা যাবে না! যাইহোক প্রথম হুমায়ূন আহমেদ পড়ি ২০০৫ সালে। যদিও বয়স তখন ১৮ হয় নি। কিন্তু পরিবার থেকে দূরে থাকি। দেখার কেউ নাই। পড়ে ফেললাম 'তেঁতুল বনে জোছনা' 'এই শুভ্র! এই' 'বৃষ্টি বিলাস' 'কুটু মিয়া' 'মেঘ বলেছে যাবো যাবো' 'কোথাও কেউ নেই' 'পারাপার' 'ময়ূরাক্ষী' 'নন্দিত নরকে' 'মৃন্ময়ী' 'তিথির নীল তোয়ালে' 'সকল কাঁটা ধন্য করে' 'আমার ছেলেবেলা' আরও কত কত! সেই থেকে শুরু, এখনো পড়েই চলেছি। রাজশাহীর সোনা দীঘি মসজিদের সামনে একটা পুরাতন বইয়ের দোকান আছে 'হোমার বুকস্‌' নামে। আমার লিস্টে রাজশাহীর (বই পাগল) যারা আছেন তাদের 'হোমার বুকস্‌' খুব ভাল চেনার কথা! যাক সেই কথা। সপ্তাহে দুই দিন চলে যেতাম 'হোমার বুকস্‌' এ। পুরাতন বই গুলো কম দামে বিক্রি হতো। অনেকেই বই পড়া হয়ে গেলে বিক্রি করে দিতেন। প্রায় নতুনই থাকতো। আমি ঐ গুলো কিনে কিনে পড়তাম। কত বই যে কিনেছি ঐ দোকান থেকে হিসাব নাই! রাজশাহী ছেড়েছি অনেক বছর। প্রায় ৫ বছর পর গত জানুয়ারিতে গিয়েছিলাম। অতীত স্মৃতিকে চাঙ্গা করতেই কিনা হোমার বুকস্‌ থেকে 'আসমানিরা তিন বোন' বইটি কিনে ফেললাম। আমার ছোট বোন বইটি হারিয়ে ফেলেছিল।

মজা করে একবার এক বন্ধুকে বলেছিলাম, "বই, সানগ্লাস, ক্যাপ আর গার্লফ্রেন্ড কাউকে দিবি না! একবার দিলে আর জীবনেও ফেরত পাবি না!" বই ধার দিয়ে কথাটা আমি নিজেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। মামাতো ভাইকে ধার দিয়ে হারিয়েছি হিমু সমগ্র (এবং ড্যান ব্রাউনের একটা বই), মেসের বড় ভাই 'গল্প সমগ্র' 'নবনী' নিয়ে আজও ফেরত দেননি, বন্ধু নিয়েছে 'মীরার গ্রামের বাড়ি' ফিরে পাওয়ার আশা করা বৃথা, ছোট বোন হারিয়েছে ৫টার অধিক বই (হুমায়ূন আহমেদ বাদে আরও অনেক লেখকের বই অনেকে নিয়ে আর ফেরত দেয় নি)/ তবে একজন পেয়েছিলাম যে আমার সংগ্রহের সব বই পড়ে আবার ঠিক ঠিক ফেরত দিয়েছেন!

নিজেকে হুমায়ূন ভক্ত বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসি। এই মানুষটা কৈশোর আর যৌবনের সবটুকু আবেগের সাথে জড়িত। অনেকেই বলেন হুমায়ূন আহমেদ শুধু নিজের জন্য পাঠক তৈরি করেছেন। আমার ধারণা এই কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। হুমায়ূন আহমেদ আমাকে বই পড়া শিখিয়েছেন। প্রচুর বই পড়ি এখন। হুমায়ূন পাঠক তৈরি করেছেন তবে শুধু নিজের জন্য না!
লেখাটা শুরু করেছিলাম অদ্ভুত স্বপ্নের কথা দিয়ে! শেষটা করছি তেমনই আরেকটা অভিজ্ঞতা দিয়ে! তবে এটা স্বপ্ন না, বাস্তব। প্রায় এক মাস ধরে 'লীলাবতী' পড়ছি। শেষ করতে পারছি না! সমস্যার শুরু ভুমিকা থেকেই। ভূমিকাতে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নানা বাড়ির বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন "নানা বাড়ির স্মৃতি মাথায় রেখেই 'লীলাবতী' উপন্যাস লেখতে শুরু করেছিলাম" সেখান থেকে আমার ধারণা তৈরি হয়েছে 'লীলাবতীর' কিছু কিছু ঘটনা সত্যি! সবচে বড় ব্যাপার লীলাবতীর বাবা সিদ্দিকুর রহমানকে আমার হুমায়ূন আহমেদ বলে মনে হয়! 'লীলাবতী' লেখার সময় কি হুমায়ূন আহমেদ একই সাথে 'দুই জগতে' বসবাস করছিলেন? (হুমায়ূন আহমেদের পাঁড় ভক্তদের এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা আমি বলতে চাচ্ছি!) ধ্যাত! কি লিখতে কি লিখছি! থাক! আমার সমস্যা আমার মাথাতেই থাক! 


শূন্য পথিকের মূল পোস্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment