Friday, July 12, 2013

অনুগল্পঃ জীবন যেমন


চেয়ারম্যান বাড়িতে আজ হুলুস্থুল অবস্থা। একটা গরু জবেহ করা হয়েছে। বাড়ির বাইরে গাছের সাথে একটা ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে। আকরাম খাঁ’র ‘গ্রিন সিগনাল’ পেলেই জবেহ করা হবে, মৌলানা সাহেব ছুরি হাতে তৈরি। মৌলানা সাহেবের আজ অন্য কোনো কাজ নেই, এই বড় বাড়িতে তাঁর দাওয়াত। 
বড় পুকুরে জাল ফেলার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। চেয়ারম্যান আকরাম খাঁ পুকুর পাড়ে একটা চেয়ার নিয়ে চিন্তিত মুখে বসে আছেন। জাল ফেলার আগে জেলের ভাব দেখে উনার সন্দেহ হচ্ছে। রোগা পাতলা চেহারার জেলে। তার ধারণা জাল ফেলার সাথে সাথে ধাক্কা খেয়ে জেলেও পানিতে পড়ে যাবে! প্রথম বার জাল ফেলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাল তোলার পর যদি বড় মাছ না ওঠে, যার নামে জাল ফেলা হয় তার অমঙ্গল হয়।

আজ জাল ফেলা হচ্ছে উনার ছোট ভাই আমিনুর খাঁ’র নামে। আসলে চেয়ারম্যান সাহেবের এত আয়োজন উনার ছোট ভাইয়ের জন্যই।
গতকাল সন্ধায় প্রায় দশ বছর পর আকরাম খাঁ’র ছোট ভাই আমিনুর খাঁ আমেরিকা থেকে সপরিবারে দেশে এসেছে। সে এখন ঢাকাতে আছে। আজ ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসছে। আকরাম খাঁ’র ইচ্ছে ছিল উনি নিজে বিমানবন্দরে থেকে ছোট ভাইকে বাড়ি নিয়ে আসবেন। কিন্তু উনি না থাকলে এই দিকে এত আয়োজন ঠিক মত হতো না। উনার আশেপাশে অনেক লোকজন কিন্তু একটাও কাজের না, সব অপদার্থের দল! এই জেলেকে যে ধরে এনেছে তাকে ধরে তার এখন থাপড়াতে ইচ্ছে করছে। 

জেলে জাল ফেলা দেখে আকরাম খাঁ’র মেজাজ পুরোপুরি বিগড়ে গেল! তিনি যে ধারণা করেছিলেন এটা ঠিক, আসলেই এই গাধা ঠিক মত জাল ফেলতে পারে না। তিনি নিশ্চিত এই ভাবে জাল ফেললে ভাল কোনো মাছ উঠবে না। আকরাম খাঁ ঠিক করলেন বড় মাছ না উঠলে জেলে হারামজাদার পাছায় একটা লাত্থি দিয়ে বিদায় করে দেবেন! 
থানা থেকে ওসি ফোন করেছে। আজ চেয়ারম্যান বাড়িতে ওসির দাওয়াত আছে। আকরাম খাঁ বিরক্ত মুখে ফোন ধরে বললেন ‘ওসি, ফোন দেওয়ার আর সময় পেলে না? কি বলবা জলদি বল!’
-চেয়ারম্যান সাহেব, বটতলার চার রাস্তার মোড়ে একটা মাইক্রো গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। আজ আর মনে হয় আপনার বাসায় আসতে পারছি না।
-বল কি! গাড়িতে কয়জন ছিল? কি অবস্থা এখন?
-যতদুর শুনলাম সবাই স্পটডেড! স্পটে গিয়ে আপনাকে জানাব...

ওসি ফোন কেটে দিল! এইটা আরেকটা গাধা! তিনি মনে মনে বললেন ‘গর্ধব’! খবরটা শুনে আকরাম খাঁ’র মাথায় চক্কর দিয়ে উঠল। গাধাটা ঠিক মত কিছু বলতেও পারল না। আমিনুরের আসার সময় হয়েই এসেছে তাহলে কি... নাহ্‌! আকরাম খাঁ বেশি কিছু চিন্তা করতে পারলেন না। জাল ফেলা দেখেই উনার মনে ঘুণ ধরেছে! দ্রুত ছোট ভাইয়ের মুঠোফোনে ফোন দিলেন।
-হ্যাঁ ভাইজান! আমরা রাস্তায়, এই তো চলেই এসেছি।
-সব ঠিক ঠাক আছে তো?
-জী ভাইজান সব ঠিক আছে। আর ঘণ্টা খানেক লাগতে পারে।
-আচ্ছা, সাবধানে আসিস।


আকরাম খাঁ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। জেলের জাল তোলা শেষ। বেশ কয়েকটা বড় মাছ ধরা পড়েছে। জেলে হাসি হাসি মুখ করে জাল থেকে মাছ গুলো বের করে বালতিতে রাখছে। জালের সাথে বেশ কিছু ছোট মাছও উঠে এসেছে। আশেপাশের ছোটছোট বাচ্চারা একটা দুইটা চিংড়ি মাছ নিয়ে দৌড় দিচ্ছে। আকরাম খা’র মন এখন খুব হালকা। তিনি মনে মনে সিধান্ত নিলেন যাওয়ার সময় জেলেকে একটা বড় মাছ আর মোটা অংকের বকশিস দিতে হবে। আজ তার মনে বেজায় আনন্দ। আনন্দ নিজের মধ্যে চাপা রাখতে নেই, আনন্দ সব সময় চার পাশের মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হয়!

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment