Friday, July 12, 2013

অনুগল্পঃ আপোষ


মধ্যরাতে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালে নিকোটিন আসক্তদের মস্তিষ্ক সর্ব প্রথম নিকোটিনের অভাব জানান দেয়। এবং নিশ্চিত ভাবে তখন সিগারেটের প্যাকেট যথারীতি খালি থাকে! আনিসের কথা না, এটা ওর সব থেকে কাছের বন্ধু শফিকের বয়ান! শফিকের কথা গুলো আনিসের কাছে এখন বয়ানের মতই। গত দু’মাস শফিকই আনিসের ত্রাতা! যদিও শফিক ছেলেটা আনিসকে খুব পছন্দ করে এবং তারা খুব ভাল বন্ধু, তবুও এই শহরে একজন মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হলে তার কাছে নিজেকে একটু ছোট হতে হয়! এটাই নিয়ম! পাঁচ মাসের মেস ভাড়া আর দুই মাসের খাওয়া খরচ বাঁকি রেখে এক রকম পালিয়েই আনিস শফিকের রুমে উঠেছে।

‘থাকবি, খাবি আর চাকরী খুঁজবি! কোনো সমস্যা নাই, কিন্তু টাকা চাইবি না! টাকা হল সম্পর্ক নষ্টের মূল, বুঝলি? বাপের সাথে সন্তানের, ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের, বন্ধুর সাথে বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট হয় এই টাকার কারণে! এই যে তুই পালিয়ে বেড়াচ্ছিস ক্যান? এই টাকার কারণে! টাকা ছাড়া অন্য একটা কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয়, বলতে পারিস ক্যান?’
শফিক কথা বলতে পছন্দ করে। একবার কথা বলতে শুরু করলে আর থামতে চায় না। কথার মাঝখানে কেউ কথা বললে খুব বিরক্ত হয়। শফিকের মুখের ভাব দেখে আনিস বলল, ‘জানি না, তুই বল!’

শফিক এই কথাটাই শুনতে চাচ্ছিল। কথাটা লুফে নিল,
-জানতাম পারবি না! কারণটা হচ্ছে নারী। এই নারীর কারণে সেই বাবা আদম থেকে শুরু করে যুগে যুগে নানা ক্যাচাল, যুদ্ধ! সব ক্যাচালের পেছনে হচ্ছে এই মেয়েরা!
-কিন্তু বন্ধু, কবিতায় আছে ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান্‌ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
-চুপ শালা! তোর কবিতার খেতা পুড়ি! থামা তোর কবিতা। আমার সামনে কবিতা কপচাবি না! এত কবিতা লিখিস তো কবিতা দিয়ে কি বাল ছিঁড়েছিস? তোর কবিতারে আমি টুট টুট টুট...!!
-দোস্ত এটা আমার কবিতা না! জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কবিতা!
-বলিস কি? সরি সরি! গ্রেট ম্যান! অবশ্যই গ্রেট ম্যান! উনার কবিতাকে এইসব বলা উচিৎ হয়নি! ভুল হয়ে গেছে! অবশ্যই ভুল হয়ে গেছে। পাপ কাটাতে হবে, তুই আমাকে একটা চড় মার! আমি বলছি মার, দেরি করিস না। পাপ শরীরে নিয়ে ঘুরতে ভাল লাগে না! উনি বেঁচে থাকলে উনার বাড়িতে গিয়ে উনার হাতের চড় খেয়ে আসতাম! গ্রেট ম্যান! উনার হাতে চড় খেলেও শান্তি!

এই হচ্ছে শফিক! কবিতা শফিকের খুবই অপছন্দের বিষয়। শফিকের ধারণা ধনী মানুষদের কবি হওয়া উচিত! হত দরিদ্র একজন ময়লা পাঞ্জাবী-ছেঁড়া সেন্ডেল পরে কবিতা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ফেরি করে বেড়াবে এটা হতে পারে না! কবিতা লিখবে রবীন্দ্রনাথের মত মানুষ গুলো! পৈত্রিক সূত্রে অঢেল সম্পদ থাকবে, নিশ্চিন্তে পদ্মা নদীতে বজরা ভাসিয়ে একের পর এক কবিতা লিখে যাবে! কেউ বই বের না করতে চাইলেও সমস্যা নেই, নিজের টাকা দিয়ে বই ছাপিয়ে বিলি করা যাবে! এই তুলনায় আনিসের কবি হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই! 
আনিস বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। মধ্য রাতে আকাশে শরতের মত সাদা খন্ড খন্ড মেঘ। কিন্তু আশ্চর্য এখন বর্ষা কাল চলছে। মাথায় কয়েটা লাইন ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্য কোনো দিন হলে হয়ত কয়েক লাইন লিখেও ফেলত। আজ আর ভাল লাগছে না। আনিস ক্লান্ত হাতে একটা খাম নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। গত সপ্তাহে সে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিয়েছিল। চিঠিটা ঐ কোম্পানি থেকেই এসেছে! কিন্তু সে খামটা খোলার মত সাহস পাচ্ছে না! সে ঘামছে! 
শফিক অবাক হয়ে আনিসকে দেখছে। আনিস নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে! শফিকের দিকে তাকিয়ে আনিস ভাঙা গলায় বলল, 
“কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি”

শফিক কিছুই বুঝতে পারল না। এই বিশাল পৃথিবীতে কম বোঝাটা ভাল, যে যত কম বুঝবে সে তত সুখী। কথাটা কোথায় জানি পড়েছিল? নাহ্‌!! আসলে শফিকের বাবা ঠিকই বলতেন। শফিকের মাথার পুরাটাই গোবর!

শূন্য পথিকের মূল পোস্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment