Friday, July 5, 2013

অনুগল্পঃ নিশাচর কষ্ট


শেষ রাতের দিকে হঠাৎ লোপার ঘুম ভেঙে গেল। ইদানিং প্রায়ই এমন হচ্ছে। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। তখন খুব কষ্ট হয়। বুক ফেটে কান্না আসে। অমি’র কথা মনে হয়। অমিকে দেখতে ইচ্ছা করে। জানতে ইচ্ছা করে, অমি কেন তার সাথে এমনটা করল? সে তো কখনো কারো ক্ষতি করেনি, কাউকে কষ্ট দেয়নি। তাহলে তার সাথেই এমনটা কেন? জবাবটা লোপা হয়ত কোনো দিনই পাবে না কারণ লোপার সামনে দাঁড়ানোর সাহস অমি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। শেষ যে দিন অমি ফোন করেছিল সে দিন ওর কণ্ঠ শুনে লোপার খুব মায়া হচ্ছিলো।
কিন্তু লোপা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না! যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিল, যার জন্য এই পৃথিবী-পরিবার-বন্ধুদের সাথে লড়াই করে আসছিলো সেই অমি কিনা বলে সে এত দিন লোপার সাথে অভিনয় করেছে। সে লোপাকে একদমই ভালোবাসে না। অমির সেই কথা গুলো এখনো লোপার কানে বাজে,
‘লোপা তুমি অনেক ভাল মেয়ে। আমি তোমাকে ধোঁকা দিতে পারব না। আমি একজনকে খুব ভালোবাসতাম। কিন্তু সে আমাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে। এরপর থেকে আমি মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করি। মেয়েদের কষ্ট দিই। আমি অনেক খারাপ, লোপা। তুমি আমাকে মাফ করে দিও। আমি আর কখনো তোমার সামনে আসবো না।‘

এই অমিকেই লোপা জীবন দিয়ে ভালোবেসেছিল। অমির সাথে লোপার পরিচয় ফেসবুকে। তখন লোপা থাকতো চিটাগাং ওখানেই লোপাদের বাসা। লোপার বাবার চিটাগাং বিজনেস আছে। আর অমি ঢাকাতে পড়াশুনা করত। প্রথম প্রথম ফেসবুকে অমি লোপাকে অনেক মেসেজ করত। লোপা অতটা পাত্তা দিত না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হলে মেসেজের রিপ্লাই দিত। এভাবেই তাদের বন্ধুত্বের শুরু। এরপর প্রায় প্রায় চ্যাট হতো। একদিন অমি তার কাছে মোবাইল নাম্বার চায়। অনেক পীড়াপীড়ির পর লোপা তাকে মোবাইল নাম্বারটা দেয়। সপ্তাহ খানিক কথার পর লোপার কেমন জানি লাগে। সে পুরাতন সিম কার্ড বদলিয়ে নতুন সিম কার্ড নেয়। অমি তার নতুন নাম্বার নেওয়ার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু লোপা চুপ থাকে। অমির চাপাচাপিতে লোপা তার জন্মদিনে আবার অমিকে নতুন নম্বরটা দেয়। 

এবার আর অমি দেরি করে না। সরাসরি লোপাকে তার মনের কথা বলে। লোপাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। একদিন সত্যি সত্যি সে ট্রেনের নিচে ঝাপ দেওয়ার জন্য চলে যায়। আস্তে আস্তে লোপার মন নরম হতে থাকে। তাদের নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। লোপা চাটগাঁ আর অমি ঢাকা। বন্ধুত্ব থেকে ভাললাগা, ভাললাগা থেকে ভালোবাসা। এক পর্যায়ে ব্যাপারটা সবাই জেনে যায়। পরিবার বন্ধুরা অনেক চেষ্টা করেও লোপাকে অমির কাছে থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। সুন্দর কিছু রাত, দারুন কিছু মুহূর্ত কাটে মুঠোফোনের দুপাশে। এ যেন কল্পনার রাজ্যে বসবাস। কল্পপুরী থেকে বাস্তবে ফিরতেও দেরি লাগে না। অমি তার আসল চেহারা নিয়ে হাজির হয়। অমির অনেক সমস্যা, টাকা লাগবে। সরল বিশ্বাসে একবার টাকা পাঠায়, আবার পাঠায়, আবার! এভাবে চলতেই থাকে।

ও, একটা কথা বলাই হয়নি! লোপা খুব সুন্দর গীটার বাজাতে পারে। অনেক শখের গীটার। এবার অমি গীটারটা চায়। তখন লোপার পরীক্ষা চলছিল। সময় থাকলে হয়ত গীটারটাও পাঠিয়ে দিত। শুরু হল ঝগড়া। অমি ইদানিং আর তেমন ফোন করে না। ভাল মত কথাও বলে না। শুধু ঝগড়া করে। লোপার কষ্ট হয়। একা একা একটা সম্পর্ক আর কত দিন টেনে ধরে রাখা যায়? পরিবার-বন্ধু থেকে বিচ্ছিন্ন লোপা একদিন খেয়াল করে অমির ফেসবুক থেকে তাকে ব্লক করা। অমিকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ঐ অ্যাকাউন্টটা তার কাছে নাই। ওটা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু লোপা অন্য একজনের মাধ্যমে ঠিকই জানতে পারে অ্যাকাউন্ট আছে কিন্তু সে লোপাকে ব্লক করে দিয়েছে। 

অমির অস্বাভাবিক আচরনে লোপার খুব খারাপ লাগতো। ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নিয়ে লোপার অ্যাকাউন্টে ঢুকত, এটা ওটা নিয়ে ঝগড়া করত। লোপা নিজেকে গুটিয়ে নেয়। শত কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রাখে। তাদের মধ্যে ব্রেকআপ হয়।
কিন্তু লোপা এখনো মানতে পারে না অমি তার সাথে শুধু অভিনয় করেছে! এত এত কথা, এত অনুভূতি, এত মুহূর্ত সব মিথ্যা ছিল? সব অভিনয়? কিন্তু লোপার ভালোবাসা তো মিথ্যা ছিল না। তো তার সাথেই কেন এমন হল? লোপা সব সময় এই প্রশ্ন‌টা খুঁজে ফেরে। নিশাচর কষ্ট গুলো এখন তার নির্ঘুম রাতের সাথী।

বিঃ দ্রঃ কাকতালীয় না। তবে স্বাভাবিক কারণেই নাম গুলো ছদ্ম।

শূন্য পথিকের মূল পোষ্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment