Thursday, July 18, 2013

অনুগল্পঃ অর্থহীন জীবন


নুরু মৃধা বাড়ির উঠান আজ লোকে লোকারণ্য। সবার চোখে তার জন্য করুণা। নুরু মৃধা অনেক শক্ত মনের মানুষ কিন্তু তিনি নিজেকে স্থির রাখতে পারছেন না। উঠানে তার ছোট বেলার বন্ধু রশিদকেও দেখা গেল। রশিদ তার দিকে তাকিয়ে তিরস্কার জড়ানো মৃদু হাসি দিল! তিনি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। নুরু মৃধার চোখের সামনে অতীতের সব স্মৃতি ভেসে উঠছে। বেশি দিন আগের কথা তো না। তখন গ্রামের মধ্যে একটা গুজব উড়ে বেড়াচ্ছিলো। তিনদিন ধরে রশিদের মেয়ে লিপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! যদিও রশিদের পরিবারের সবাই তখন ব্যাপারটা স্বীকার করেনি। তারা সবাইকে বলছিল লিপি খালার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সবাই লিপির খোঁজ করছে। কিন্তু গ্রামের মানুষের বিনোদনের বড়ই অভাব। ব্যাপারটা সবাইকে বিনোদনের খোরাক দিল। সবখানে এই বিষয় নিয়ে মুখরোচক আলোচনা! মানুষের মুখে হাত দিয়ে রাখা মুশকিল। তার উপর রশিদ দক্ষিণ পাড়ার লালনের নামে লিপি অপহরণের মামলা করে দিল! আলোচনার আগুনে ঘি পড়ল! গুজবটা সত্যি প্রমাণ হয়ে গেল। কারণ লিপি নিখোঁজের দিন থেকে লালনও লাপাত্তা! লিপিকে নিয়ে গ্রামে তখন ছিঃ ছিঃ রব। এভেবে বেশ কিছু দিন কেটে গেল। মানুষ গুলো যখন ধীরে ধীরে সব ভুলে যেতে বসেছে ঠিক তখনই সবাইকে অবাক করে লিপি একা একা বাড়ি ফিরে এলো! এরপরের ঘটনা আরও জটিল আর স্পর্শকাতর।
 নুরু মৃধার মনে পড়ে লিপি-লালনের এই ঘটনা নিয়ে গ্রামে বেশ কয়েকটা সালিশ হয়েছিলো। সালিশে লিপির অভিযোগ এত দিন লালন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে রাত কাটিয়েছে! তো লালন গ্রামে ফিরে আসার পর একদিন যথারীতি সালিশ চলছে। দেন দরবার করে দুই জনের কথা শুনে বোঝা যায় দোষ শুধু একা লালনের না, লিপিরও দোষ আছে। সে অনেক কথা। সালিশ শেষে সিধান্ত হল লিপিকে লালনের বিয়ে করতে হবে, দেনমহর গ্রামের প্রধানরা ঠিক করে দেবেন। লালন মেনে নিলেও সবাইকে আবার আশ্চর্য করে দিয়ে লিপি আর তার বাবা এই বিয়েতে নিম রাজি! গ্রামের সবার যখন মাথায় হাত নুরু মৃধা ভরা সালিশে তার বন্ধু রশিদকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, 
রশিদ, তোর কি ধারণা আমরা এই সবাই এখানে বাল ছিঁড়তে এসেছি? আমাদের কথা মানবি না তো তোর আর তোর মেয়ের যা ভাল হয় তোরা কর! আর একটা কথা বলে রাখি আমার মেয়ে এমন করলে কবেই কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিতাম! নির্লজ্জের মত বিচার চেয়ে কেলেঙ্কারি করতাম না! মনে রাখিস!

আজ রশিদের দৃষ্টি আর ঠোঁটের কনে এক চিলতে হাসি হয়ত নুরু মৃধাকে তিরস্কার করে এই কথাটাই বলছিল ‘বন্ধু সেদিন তো খুব বড় গলায় বলেছিলি মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবি! কই আজ কি হল? তোর মেয়েও তো আজ একই কাজ করল! আজ তোর মুখের বুলি কই?’
নুরু মৃধার ছোট মেয়ে নিপা রসিদের মেয়ে লিপির মত ঠিক একই কাজ করেছে। বাড়িতে নিপার বিয়ের কথা চলছিল। গত শুক্রবার ছেলে পক্ষ নিপাকে দেখে গেছে। আর শনিবার সে বাড়ি থেকে কিছু টাকা পয়সা আর গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়। গতকাল রাতে অচেনা একটা নাম্বার থেকে একজনের ফোন পেয়ে নুরু মৃধার বড় ছেলে নিপাকে একটা আবাসিক হোটেল থেকে অচেতন অবস্থায় বাড়ি নিয়ে আসে। 

নুরু মৃধা আর কিছু চিন্তা করতে পারলেন না। নিজেকে আজকে তার পরাজিত মনে হচ্ছে। পরাজিত জীবন থেকে তিনি মুক্তি চান। আর তার এই মুক্তির পথ নিজেকেই বের করতে হবে। হাতের ছোট্ট বোতলের সবুজ তরলে তিনি তিরস্কার থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নিলেন। কারণ তার কাছে বেঁচে থাকাটা এখন অর্থহীন। আর অর্থহীন পরাজিত জীবন বয়ে বেড়ানোর কোনো মানে হয় না।

শূন্য পথিকের মূল পোস্ট>>

No comments:

ফেসবুক প্লাগইন: শূন্য পথিক by শূন্য পথিক (ফেসবুকে আমি) →ফেসবুকে অ্যাডমিন- হুমায়ূন আহমেদ ফ্যান পেজ

Post a Comment